ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে সম্ভাব্য ১৫ প্রার্থীর নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। এরা ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি হিসাবে ভোটে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি উমামা ফাতেমাসহ অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠ গোছানোর কাজ করছেন। দলীয় প্রার্থীর নাম এখনও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। প্যানেল গোছানোর কাজও শেষ হয়নি। ফলে আলোচিত নামগুলোতে পরিবর্তন আসার জোর সম্ভাবনা আছে, কমতে বা বাড়তে পারে প্রার্থীর সংখ্যাও। এদিকে প্রায় ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর নাম রেখে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এ ঘোষণার পরপরই ডাকসুর সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যারা গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত দিয়েছেন ভিপি-জিএস পদের লড়াইয়ে তাদের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। এদের মধ্যে ভিপি পদে সাত এবং জিএস পদে ৮ জনের নামে বেশি আলোচনা হচ্ছে। যেমন, ছাত্রদলের ঢাবি শাখা সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম কাওসার এবং কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারী হামিম ভিপি-জিএস পদে লড়াইয়ে আলোচনায় রয়েছেন। জানা গেছে, শিপন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। গত বছরের ১ মার্চ তিনি ঢাবি ছাত্রদলে এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। অন্যদিকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলাম। এছাড়া ২০১৮-১৯ সেশনের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম।
Advertisement
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের আলোচনায় রয়েছেন। আব্দুল কাদের ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নয় দফা প্রণয়ন করে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আবু বাকের মজুমদার ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তাকে আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামসহ অন্যদের সঙ্গে আটক করে ডিবি পুলিশ। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী এবং সদস্য সচিব জাহিদ হাসান।
স্বতন্ত্র প্যানেলে আলোচনায় রয়েছেন প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য সাবেক মুখপাত্র তিনি। ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অন্যতম নারী আন্দোলনকারী হিসাবেও তার খ্যাতি-পরিচিতি যে কারও থেকে আলাদা। তার সঙ্গে এই প্যানেলে আলোচনায় রয়েছেন ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। তিনি ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং আলোচনায় রয়েছেন জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ। যিনি আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। ‘শিক্ষণ’ ও ‘আস্ সুফফাহ ইসলামিক ইনস্টিটিউট’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ডাকসু নির্বাচনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক ঢাবি শাখার সভাপতি আবু সাদিক কায়েম আলোচনায় রয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিতে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ঢাবি শাখার সভাপতি রয়েছেন এসএম ফরহাদ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী।
ভিপি-জিএস পদে লড়াইয়ে আলোচনায় রয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র তিনি। তাছাড়া বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জাবির আহমেদ জুবেল আলোচনায় রয়েছেন। এছাড়াও একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী তিনি। ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়।
এদিকে খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ভোটার ৫ হাজার ৬৭৬, শামসুন নাহার হলে ৪ হাজার ৯৮, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ১০৮, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪ হাজার ৪৯৫ ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২ হাজার ৬৫১ জন।
আর ছাত্র ভোটারদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে ১ হাজার ৩১৯, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১ হাজার ২৯৮, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ২৫৪, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১ হাজার ৬০০, শহীদুল্লাহ হলে ২ হাজার ১৭, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১ হাজার ৭৭৯, বিজয় একাত্তর হলে ২ হাজার ১৩, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১ হাজার ৭৩৫, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৯৬১, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৫৫৯, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১ হাজার ৪৯৫, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৪৮০, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৩৯৪ জন।
খসড়া ভোটার তালিকা হলগুলোর নোটিশ বোর্ডে ইতোমধ্যে টাঙানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটেও তালিকা পাঠানো হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে সেটি জানানোর শেষ সময় আগামী ৬ আগস্ট বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর আপত্তি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ আগস্ট বিকাল ৪টায়।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ভোটের তারিখ রেখে মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফশিল অনুযায়ী, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ হবে ১২ থেকে ১৮ আগস্ট। মনোনয়নপত্র গ্রহণের সবশেষ তারিখ ১৯ আগস্ট। পরদিন ২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই ও ২১ আগস্ট প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ২৫ আগস্ট। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ আগস্ট। এরপর ভোটগ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর।