Saturday, August 2, 2025

এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান না থাকার পক্ষে নয় বিএনপি

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এক ব্যক্তি হতে পারবেন— এই বিষয়ে সব দল মোটামুটি একমত বলে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়া নিয়ে কারও-কারও দ্বিমত আছে। তবে, বিএনপির মতামত হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদে মত ভিন্নমত (ডিসেন্টস নোট) রাখা। সংসদে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তারা এটি ঠিক করবে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ১৭তম দিনের আলোচনার শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে গণতন্ত্র আছে, সেখানে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে কোনো বাধা নেই। এটা ঠিক করে যারা সংসদীয় পার্টি বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ পায় তারা। আর একটা পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৭-৮ জন বা আরও বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য থাকে। এখন কেউ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক দিন বা কয়েক মাস পর (প্রধানমন্ত্রী পদে) না থাকতে পারেন। সেইক্ষেত্রে তিনি দলীয় প্রধান থেকে গেলেন, আরেকজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। সুতরাং এখানে বাধ্যবাধকতা না থাকাই ভালো।

আরও পড়ুনঃ  বৃহস্পতিবারের মধ্যে জুলাই সনদের জায়গায় পৌঁছাতে পারব: আলী রীয়াজ

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে ৫ সদস্যদের সার্চ কমিটির প্রস্তাব এসেছে। সেখানে সরকারি দলের প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার আর বিরোধী দল থেকে বিরোধী দলীয় নেতা, ডেপুটি স্পিকার(বিরোধী দল) আর সংসদের তৃতীয় বৃহত্তর দলের একজন থাকবে। তারা বাছাই করবে। এই কমিটি সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলের কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে। সেখানে সরকারি ও বিরোধী দল তো নাম দেবেই। এর বাইরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নাম দেবে। সেই নামগুলো বাছাই করে সার্চ কমিটি যদি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে ঐকমত্য হতে পারলে ভালো। না পারলে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে যাবে।

বিএনপির এই নেতা জানান, দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে সার্চ কমিটির কাছে সরকারি দল ও বিরোধী দল ৫ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। আর তৃতীয় দল ২ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এই ১২ জনের মধ্যে থেকে বাছাই কমিটি যদি প্রধান উপদেষ্টার নাম চূড়ান্ত করে ঐকমত্যে আসতে পারে তাহলে ভালো। এখানেও যদি ঐকমত্যে আসতে না পারে তাহলে ঐকমত্য কমিশন থেকে প্রস্তাব এসেছে র‍্যাংক চয়েজ ভোটিংয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা নিয়োগ করার। যদিও এই বিষয়ে আজকের বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি রাজনৈতিক দলগুলো।

আরও পড়ুনঃ  বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য দেশের সব মসজিদে দোয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তাবে বাছাই কমিটির মাধ্যমে ঐক্যমতে আসতে পারলে ভালো। আর সেটি না হলে সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে এয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান আছে সেটা অনুসরণ করা হবে। তবে, সেখানে রাষ্ট্রপতির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের যে বিধান আছে সেটা বাতিল করা। সেটা এই পর্যায়ে আছে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন বাছাই কমিটি ও এয়োদশ সংশোধনীর মাঝখানে অন্য কোনও বিধান বের করা যায় কিনা সেটা খুঁজে দেখছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে সংবিধানের ১২৩(৩) ধারা ও ৭২(১) ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হবে। প্রথমটি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হলে আগের সংসদের সদস্যদের বহাল থাকার বিতর্কিত বিধান সম্পর্কিত, আর দ্বিতীয়টি অধিবেশন আহ্বান নিয়ে ৬০ দিনের সময়সীমার সাথে সম্পর্কিত। বিএনপির মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে এসব অনুচ্ছেদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধনের প্রয়োজন হবে এবং এতে কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক নেই।

আরও পড়ুনঃ  বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য দেশের সব মসজিদে দোয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে

আলোচনার শেষদিকে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে এ আলোচনায় বিএনপি অংশ নেয়নি। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে আজ কিছু বলছি না। আগামীকালের আলোচনায় অংশ নিয়ে আমাদের মতামত দেব।’

সংলাপে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বসম্মতি সবসময় সহজ হয় না। তবে, ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সময় যেভাবে তিনদলীয় ঐকমত্য হয়েছিল, তা সফল হয়েছিল। সুতরাং আলোচনা ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আমরা আবারো একমত হতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বিভক্তি নয়, ঐকমত্য। বিভক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন থেকেই যাবে।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ